educationsitebd@gmail.com is the address of this site.
সুখী বাংলাদেশ
শিক্ষা বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩
শুক্রবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৩
নরপশুদের রুখতে হবে
জানুয়ারি
০৪, ২০১৩, শুক্রবার : পৌষ ২১, ১৪১৯
(উপ-সম্পাদকীয়)
নরপশুদের
রুখতে হবে
মোঃ মু জি বু র র হ মা ন
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার
হওয়া ২৩ বছর বয়সী মেডিকেলের যে ছাত্রীটি কয়েকদিন আগে পুলিশকে দেয়া জবানবন্দিতে
বলেছিলেন, ‘লড়াই না করে কোনভাবেই থামব না’, সেই ছাত্রীটির জীবন-প্রদীপ অবশেষে নিভে গেছে; মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বর রাতে তার ওপর
পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল বাসচালকসহ ছয়জন। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই মেয়েটি ও সঙ্গে থাকা তার ছেলেবন্ধুকে
রড দিয়ে বেদম পিটিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় বাস থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল
দুর্বৃত্তরা। ভারতে চিকিৎসারত থাকাবস্থায় মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে
উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ
হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ভারত সরকার। মেয়েটির চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার
ভারত সরকার বহন করলেও শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না। পরিবার-পরিজন ও চিকিৎসকদের
সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে করতেই সিঙ্গাপুরের ওই
হাসপাতালে শনিবার ভোরে মারা গেছেন মেয়েটি। মানুষরূপী মানুষ (নাকি অমানুষ?) কতটা বর্বর ও অসভ্য হলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, এটা তার এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে রইল।
চলন্ত বাসে মেডিকেল ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এ
নৃশংস ঘটনার বিচারের দাবিতে পুরো ভারত এখনও উত্তাল। বিভিন্ন মহল এ ঘটনার বিচারের
দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। দিল্লিতে জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা। নিরাপত্তার
কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় অনেকগুলো মেট্রোস্টেশন। মনমোহন সিং সরকার এ ঘটনা নিয়ে
কার্যত যথেষ্ট চাপের মুখে রয়েছে। তবে ছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যাতে কোন
অপ্রীতিকর ঘটনা বা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকার অনুরোধ
জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক মহল বিষয়টির ওপর নজর রেখে চলেছে। একই
সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কি
নারীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে?
বিশাল ভারতে সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধ বিশ্লেষণ
করলে দেখা যায়, গত চার
দশকে অন্য যে কোন বড় অপরাধের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। প্রকাশিত
তথ্য মতে, বেশিরভাগ
ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণকারীর কোন শাস্তি না হওয়ায় বা তুলনামূলকভাবে শাস্তি কম হওয়ায় এ
ধরনের অপরাধ বেড়ে চলেছে। ফলে ভারতে ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা রোধে যে বিদ্যমান
আইন রয়েছে তা দুর্বল কিনা এমন প্রশ্নও অনেকে এখন তুলছেন। এছাড়া অপরাধীর বিচার না
হওয়ার যে অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, সেটিও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন
অনেকেই। এসব প্রশ্নের মুখে ভারত সরকারকে এখন নতুন করে ভাবতে হবে কিভাবে ধর্ষণ ও
যৌন নিপীড়নের মতো নৃশংস ঘটনা রোধে কার্যকর পন্থা বের করা যায়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার বরাত দিয়ে ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের একটি
পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয়
অপরাধ ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্যানুযায়ী, ১৯৭১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৮৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ হারে ধর্ষণের
ঘটনা বেড়েছে। ১৯৭১ সালে ২ হাজার ৪৮৭টি ধর্ষণের ঘটনার বিপরীতে ২০১১ সালে ঘটেছে ২৪
হাজার ২০৬টি ধর্ষণের ঘটনা। অথচ ১৯৫৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছয় দশকে হত্যার মতো
অপরাধ বেড়েছে ২৫০ শতাংশ। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা
যায়, এ ব্যাপারে দিল্লির
কুখ্যাতি সারা ভারতে ছড়িয়ে রয়েছে। তবে ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও ধর্ষণের ঘটনা কম
ঘটছে না। গত বছর মধ্যপ্রদেশে ৩ হাজার ৪০৬টি, পশ্চিমবঙ্গে ২ হাজার ৩৬৩টি, উত্তর প্রদেশে ২ হাজার ৪২টি, রাজস্থানে ১ হাজার ৮০০টি, মহারাষ্ট্রে ১ হাজার ৭০১টি, আসামে ১ হাজার ৭০০টি ও অন্ধ্রপ্রদেশে ১ হাজার ৪৪২টি ধর্ষণের
ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য রয়েছে।
এদিকে নয়াদিল্লিতে মেডিকেল ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যখন
বিক্ষুব্ধ জনতা আন্দোলন-প্রতিবাদ অব্যাহত রেখে চলেছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশের টাঙ্গাইলেও ঘটল একই ঘটনা। নরপশুরা এক
স্কুলছাত্রীকে মধুপুরের এক নির্জন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। বিপর্যস্ত মেয়েটি
এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভারত-বাংলাদেশে এসব ঘটনা একদিকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক
সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে, অন্যদিকে
নারীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এখানে বলা দরকার, গণমাধ্যমে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধের যেসব খবর প্রকাশিত হয়, বাস্তবে তার চেয়ে আরও বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। কারণ সব
খবর যেমন গণমাধ্যমে উঠে আসে না, তেমনি
সামাজিকভাবে মর্যাদাহানিকর বলে অনেকেই ধর্ষণসহ যৌন নিপীড়নের অনেক ঘটনা প্রকাশ করেন
না। অনেক নির্যাতিতা হেয়-প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে এবং অপমানের দুঃখ-কষ্ট ও গ্লানি সইতে
না পেরে বেছে নেন আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত পথ। আবার এমন অনেক ঘটনা থেকে যায়, যেগুলো অপরাধীদের প্রচণ্ড হুমকির
মুখে ভুক্তভোগীরা চেপে যেতে বাধ্য হন। এসব পরিস্থিতি একটি দেশের সাধারণ মানুষের
নিরাপত্তাহীনতাকেই প্রকাশ করে।
ধর্ষণের মতো ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনা যে শুধু ভারত ও বাংলাদেশেই
ঘটছে, তা নয়। অন্যান্য দেশেও
ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। কোথাও কম, কোথাও
বেশি। ধর্ষণের ঘটনা যেখানেই ঘটুক না কেন, এটি জঘন্য অপরাধ। এ অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত
করা না গেলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে; রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের গতি ব্যাহত হবে। ধর্ষণের ঘটনা যে দেশেই
ঘটুক, সংশ্লিষ্ট সরকার যদি এর
পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর উপায় বের করতে না পারে, তাহলে তা ওই দেশের পরিবার ও সমাজের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য
চরম হুমকি হয়ে দেখা দেবে। এক সময় এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও সমস্যা হিসেবে দেখা
দিতে পারে।
যে কোন ঘটনার পেছনেই থাকে কিছু না কিছু কার্যকারণ। তেমনি
ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পেছনেও নানা ধরনের কারণ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে কিশোরী ও তরুণীদের
উত্ত্যক্ত করার মধ্য দিয়ে একজন অপরাধী মূলত ধর্ষণের মতো চরম জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে
পড়ে। কেউ কেউ সমবয়সী তরুণীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠায়
পরবর্তীকালে ধর্ষণে লিপ্ত হয়। অন্যদিকে ধূমপানের প্রভাব, মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি, অশিক্ষার প্রভাব, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া, উচ্ছৃংখল জীবন কাটানো, বখাটেপনা, রাষ্ট্রে
ধর্ষণ ও নিপীড়ন রোধে বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা ইত্যাদি কারণেও সমাজে ধর্ষণের মতো
অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। এছাড়া ব্যক্তিজীবনে অশ্লীল সিনেমা ও অপসংস্কৃতির নেতিবাচক
প্রভাব তো রয়েছেই; যেগুলো
মানুষকে অনেক সময় করে তোলে বিকৃত স্বভাবের। ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নীতিনৈতিকতাবহির্ভূত জীবনাচারে অভ্যস্ত হওয়া, কিশোর-তরুণদের ওপর পরিবারের নিয়ন্ত্রণহীনতাও অনেককে
বিপথগামী করে তোলে সহজে। সমাজ থেকে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ দূর করতে হলে এসব দিক
নিয়ে সব দেশকেই ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে একপর্যায়ে কিশোরী, তরুণী ও নারীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
স্কুলগামী অনেক ছাত্রীকেও নিপীড়নের শিকার হতে দেখা যেত। নিরাপদ ছিলেন না
কর্মক্ষেত্রে অনেক নারীও। তখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা
হয়। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-
যৌন নিপীড়ন রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা, যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ইত্যাদি। এতে বাংলাদেশে এ
ধরনের ঘটনা কিছুটা কমেছে বলে মনে হয়। তবে ধর্ষণের ঘটনা রোধ করা যায়নি। কাজেই আমরা
আশা করব, সরকার দেশে নারীর নিরাপত্তা
নিশ্চিত করা এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে
দ্রুত।
মোঃ মুজিবুর রহমান : সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সহযোগী অধ্যাপক
mujibur29@gmail.com
শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে কি?
ঢাকা, শুক্রবার, জুলাই ২০, ২০১২, শ্রাবণ
৪, ১৪১৯
(উপ-সম্পাদকীয়)
বুয়েট পরিস্থিতি
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে কি?
মো. মুজিবুর রহমান
মাঝখানে কয়েক
মাস শান্ত থাকার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আবার উত্তাল ও অশান্ত
হয়ে উঠেছে। দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান এখন নানামুখী সমস্যায়
জর্জরিত। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনেও দেখা দিয়েছে চরম
অনিশ্চয়তা।
বুয়েটে
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ধারাবাহিকতা সংক্ষেপে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও
উপউপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগে তাদের পদত্যাগ দাবিতে গত ৭
এপ্রিল কর্মবিরতি শুরু করে শিক্ষক সমিতি। লাগাতার ২৮ দিন কর্মবিরতির পর ৪ মে
সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকরা সাময়িকভাবে
কর্মবিরতি স্থগিত করেন। তবে দীর্ঘ দিনেও শিক্ষকদের দাবি মতে সমস্যার সমাধান না
হওয়ায় গত ৯ জুন সমিতির সভায় ৩০ জুনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপউপাচার্যকে
পদত্যাগ করতে সময় বেঁধে দেয়া হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য ও উপউপাচার্য
পদত্যাগ না করায় ৭ জুলাই থেকে প্রতীকী কর্মবিরতি চলে এবং ১৪ জুলাই থেকে লাগাতার
কর্মবিরতি শুরু হয়।
এদিকে
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আকস্মিকভাবে ৪৪ দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার
পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি আরও অচলাবস্থার দিকে মোড় নেয়। একপর্যায়ে শিক্ষক সমিতি
উপাচার্য ও উপউপাচার্যের পদত্যাগের পরিবর্তে তাদের অপসারণের দাবি উত্থাপন করে।
তাদের সঙ্গে যুক্ত হন শিক্ষার্থীরা। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যায়। এরই মধ্যে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুয়েটের কয়েকজন সাবেক
উপাচার্য, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের
নেতা, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের
উপস্থিতিতে আলোচনা সভার আয়োজন করেন। আলোচনায় অংশ নেয়া প্রায় সবাই উপাচার্য ও উপউপাচার্যের
অপসারণের বিষয়ে মত দেন। তাদের অধিকাংশই সভায় অভিমত প্রকাশ করেন, এ দুজনকে স্বপদে রেখে সমস্যার সমাধান হবে না। শিক্ষামন্ত্রী আলোচনার বিষয়টি
প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করবেন বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু উপাচার্য ও উপউপাচার্যের
অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষকরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ফলে বুয়েটের
সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরও জটিল আকার ধারণের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষক
সমিতির দাবি অনুযায়ী, রোববারের (২২
জুলাই ২০১২) মধ্যে উপাচার্য ও উপউপাচার্যকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া না হলে শিক্ষকরা
একযোগে পদত্যাগ করবেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে শিক্ষকরা
পদত্যাগপত্রে সইও করে রেখেছেন। দৃশ্যত বুয়েটের পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এ
লেখাটি যখন বণিক বার্তায় ছাপা হবে তখন উপাচার্য ও উপউপাচার্য তাদের স্বপদে থাকবেন
কি না বা তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন কি না কিংবা তাদের আপসারণ করা হবে কি না,
তা স্পষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে অনুমান করা যায়, কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে অপসারণ করা না হলে তারা নিজেরা পদ ছাড়বেন না।
অন্যদিকে শিক্ষক সমিতিও তাদের দাবির ব্যাপারে অনড়। এতে বাড়ছে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত।
বুয়েটের
পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, তা সময়ই বলে দেবে। কীভাবে সৃষ্ট জটিলতার অবসান করা হবে, তা কর্তৃপক্ষের বিষয়। তবে আমরা বেশি উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা
নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের
পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে— এ দিকটি উপাচার্য, উপউপাচার্য ও শিক্ষক সমিতি
উপলব্ধি করতে না পারার কথা নয়। সংকট নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা
চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন সমস্যা
দ্রুত সমাধানের জন্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কত দিন
লাগবে সেটাই আসল প্রশ্ন। উপাচার্য ও উপউপাচার্যের বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ
থেকে থাকে, তাহলে আইনসঙ্গতভাবেই সেটির সুরাহা হওয়া উচিত। শিক্ষামন্ত্রী
যখন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন শিক্ষার্থীদের
পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটিয়ে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কতটা যৌক্তিক— সে দিকটিও সমিতির নেতাদের ভেবে দেখতে
হবে। যদিও শিক্ষক সমিতি তাদের কর্মসূচি দুই দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে বুধবার।
তবে এর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কি না, তা
নিশ্চিত নয়। মনে রাখা দরকার, যেকোনো কারণে শিক্ষার্থীদের
শিক্ষাজীবন বিঘ্নিত করার অধিকার কারও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টির ফলে
সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন একদিকে প্রলম্বিত হয়, অন্যদিকে
অভিভাবকদের ওপর বাড়ে অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা। অনেকের সরকারি চাকরিতে আবেদন করার বয়স
ফুরিয়ে যায়। এ পরিস্থিতি থেকে শিক্ষার্থীদের রেহাই দিতে হবে। কেন একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
সমস্যার সমাধান করতে এত সময় ব্যয় হচ্ছে— তা বোধগম্য নয়। এর পেছনে মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে এমন ব্যবস্থা নেয়া
দরকার, যাতে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতির
পুনরাবৃত্তি না ঘটে। মোট কথা, আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ
ও নির্বিঘ্ন শিক্ষাজীবন চাই।
যেকোনো
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কারণে সমস্যা দেখা দিতেই পারে। সমস্যার সমাধানও নিশ্চয়ই
রয়েছে। যৌক্তিক দাবি আদায় করতে হলেও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কোনো বিঘ্ন ঘটানো
সমীচীন নয়। শিক্ষকরা চাইলে পড়ালেখার কাজ চালিয়েও ক্লাসের পর আন্দোলন অব্যাহত রাখতে
পারেন। যদি এমন উদাহরণ সৃষ্টি করা যায় যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেকোনো আন্দোলনই হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ক্লাস পরিচালনায় কখনো বিঘ্ন ঘটানো হবে না;
তাহলে তা বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
শিক্ষকরা কি পারেন না ক্লাস পরিচালনা অব্যাহত রেখে তাদের দাবি আদায়ে আলোচনা চালিয়ে
যেতে? বুয়েটে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হঠাৎ করেই
হয়নি। অনেক আগে থেকেই সংকট দেখা দিয়েছে। তাহলে উপাচার্য ও উপউপাচার্য কি সংকট
নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারতেন না? শিক্ষক
সমিতির সঙ্গে তাদের কিসের এত বিভেদ? তারাও তো শিক্ষক।
তারা নিশ্চয়ই জানেন, আলোচনার মধ্যেই সমস্যার সমাধান
রয়েছে।
এখানে উল্লেখ
করা প্রয়োজন, শুধু অস্থিতিশীল
পরিবেশ বুয়েটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন
কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ
নেই। নিকট অতীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি স্মরণ করলে দেখা
যায়, সেখানেও পরিবেশ স্বাভাবিক করতে সরকারকে হস্তক্ষেপ
করতে হয়েছে এক পর্যায়ে গিয়ে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খ্যাতিমান এক শিক্ষককে
উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে
অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ফিরে যাচ্ছেন, ক্লাস হচ্ছে না। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, কোনো
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি সারা বছরই অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে তাহলে সেখানে
শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়ালেখা করবেন কীভাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে
স্থিতিশীল ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার? শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেও অনেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কেন শিক্ষকদের কারণে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে?
স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনের যদি নিশ্চয়তা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না
পাওয়া যায়, তাহলে যাদের অর্থ-বিত্ত আছে তারা পাড়ি জমাবেন
বিদেশে, আর যাদের অর্থ নেই তারা করবেন কী? এভাবে দেশের জন্য দক্ষ ও উপযুক্ত নাগরিক তৈরি সম্ভব? এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কি বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে?
এসব প্রশ্নের সুরাহা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে
যত ঘটনাই ঘটুক না কেন, এর দায়ভার
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছুতেই এড়াতে পারে না। ধারণা করি, যেকোনো পরিস্থিতির পেছনে কোনো না কোনো স্বার্থ কাজ করে। এক দল ঘটনা
ঘটায়, অন্য দল তা সামাল দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়। এর
মাঝখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। অনিশ্চিত হয়ে ওঠে তাদের
শিক্ষাজীবন। অভিভাবকরা থাকেন উদ্বেগের মধ্যে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে
উত্তরণের উপায় কী?
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি
টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
mujibur29@gmail.com
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)